‘যোগ্য’-‘অযোগ্য’ তকমা ঘিরে দ্বিধায় শিক্ষকরা, ব্যাজ পরা নিয়ে অনিশ্চয়তা

টেট মামলায় চাকরি হারানো শিক্ষক-শিক্ষিকারা একসময় একসঙ্গে পথে নেমেছিলেন নিজেদের অধিকার আদায়ে। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, ততই তৈরি হয়েছে বিভাজন। এবার ‘যোগ্য’ ও ‘অযোগ্য’ নিয়ে তীব্র মতভেদ দেখা গেল শিক্ষক সমাজের মধ্যেই। সেই প্রভাব পড়েছে আগামী ১৭ এপ্রিল ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর ডাকা কর্মসূচিতেও।

মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওই দিন সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি দফতরে কর্মীরা ব্যাজ পরে কাজ করবেন। সেই ব্যাজে লেখা থাকবে— ‘যোগ্য শিক্ষকদের ন্যায্য বিচার চাই’। তবে এই ব্যাজ পরা নিয়েই এবার দ্বিধায় পড়েছেন অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা।

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত সরকার বা আদালতের পক্ষ থেকে কারা ‘যোগ্য’ আর কারা ‘অযোগ্য’, তা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়নি। এমন অবস্থায় ব্যাজ পরে ‘যোগ্যদের’ পক্ষ নেওয়া মানেই, অজান্তেই অন্যদের ‘অযোগ্য’ বলে চিহ্নিত করা। তাই এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। সবংয়ের মশাগ্রাম শিবানন্দ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোককুমার মণ্ডল বলেন, “সরকারি নির্দেশ ছাড়া আমরা কিছু করতে চাই না। ‘যোগ্য-অযোগ্য’ এখনো ঠিক হয়নি, তাই ব্যাজ পরা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।”

ডেবরা ব্রাহ্মণশাসন কমলা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক অসীম পাল অবশ্য এই কর্মসূচির পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “যোগ্য শিক্ষকদের জন্য আমরা অবশ্যই পাশে থাকব। ওঁরা আমাদের সহকর্মী।”তবে সবং মোহাড় ব্রহ্মময়ী হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুদীপকুমার শাসমল জানাচ্ছেন, “আমি আপত্তি দেখি না, কিন্তু অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব।”

শুধু মতভেদ নয়, ব্যাজ সংগ্রহ নিয়েও দেখা দিয়েছে সমস্যা। অনেকেই জানাচ্ছেন, কীভাবে এই ব্যাজ মিলবে, তা এখনও স্পষ্ট করে জানানো হয়নি। মঞ্চের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নেতা তাপস সাঁতরা বলেন, “১৭ এপ্রিলের কর্মসূচি কীভাবে পরিচালিত হবে, তা নিয়ে ফের বৈঠক হবে। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

এদিকে সরকারি দফতরের কর্মীরাও এখনও মুখ খুলতে নারাজ। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি ফেডারেশনের জেলা সভাপতি শীতলপ্রসাদ বিদ জানান, “সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্ব যা বলবে, আমরা সেই পথেই চলব।”

একসময় লাঠি-লাথির মুখে এক হয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন যাঁরা, আজ ‘যোগ্য’-‘অযোগ্য’ নিয়ে তৈরি বিভাজনে তাঁরা নিজেরাই দ্বিধায়। সম্মান আর স্বীকৃতির লড়াইয়ে ব্যাজ একটি প্রতীক হলেও, সেটা পরা না পরা এখন এক বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৭ এপ্রিলের কর্মসূচিতে শিক্ষক সমাজ কতটা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারে, এখন তাকিয়ে সেই দিকেই।