পনেরোতেই মা! পশ্চিম মেদিনীপুরে বাড়ছে নাবালিকা গর্ভধারণ, চিন্তায় প্রশাসন

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় নাবালিকা গর্ভধারণের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৭,৪০১ জন অন্তঃসত্ত্বা মহিলা। এদের মধ্যে ৯,১৩৯ জনই নাবালিকা। সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হল—এই সংখ্যার মধ্যে ২০৩ জনের বয়স ১৫-রও কম!

গত বছর একই সময়ে (২০২৩ এপ্রিল থেকে ২০২৪ মার্চ) নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বার সংখ্যা ছিল আরও বেশি—১১,৫৬১ জন। ১,১৩০ জনের বয়স ১৫-র নিচে। স্বাস্থ্য ও প্রশাসনিক মহল বলছে, বয়স যত কম, মা হওয়া ততটাই বিপজ্জনক। কিশোরী দেহ গর্ভধারণের ধকল নিতে পারে না—এর ফল মারাত্মক হতে পারে।

এক কিশোরী মাত্র ১৫ বছর বয়সে গুরুতর অবস্থায় খিঁচুনি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, জরুরি ভিত্তিতে সিজারিয়ান করতে হয়। জন্ম নেয় এক কন্যাসন্তান, যার ওজন মাত্র ১.৭ কেজি। মা ও শিশুর অবস্থা দু’জনেরই সংকটজনক ছিল। এমন ঘটনা জেলার একাধিক হাসপাতালে বারবার ঘটছে।

জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরি জানিয়েছেন, “বাল্যবিবাহ আমাদের জেলার একটি বড় সমস্যা। একে রোধ করতেই হবে। বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।” জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, “অল্প বয়সে বিয়ে রুখতে সমাজের সকলে এগিয়ে আসতে হবে। আর যদি বিয়েই হয়, অন্তরা ইঞ্জেকশন ব্যবহার করে গর্ভধারণ এড়ানো যেতে পারে।” সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনামূল্যে এই জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজেকশন দেওয়া হয়, যার কার্যকারিতা থাকে ৩ মাস পর্যন্ত।

এদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুরের অন্তত ১২টি ব্লকে নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বার হার সবচেয়ে বেশি। তার মধ্যে রয়েছে—কেশপুর, নারায়ণগড়, সবং, পিংলা, গড়বেতা ১-২-৩, খড়গপুর ১-২, মেদিনীপুর সদর এবং শালবনি।

স্কুলগুলো দীর্ঘদিন ধরে বাল্যবিবাহ রোধে সচেতনতা চালিয়ে এসেছে। তবে চাকরি হারানো শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের সংকটে সেই প্রচারে ছেদ পড়বে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। শালবনির মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক প্রসূনকুমার পড়িয়া বলেন, “শিক্ষার পরিবেশ নিয়েই এখন চিন্তিত। তবে সচেতনতামূলক কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব।”

প্রশাসন ১০৯৮ ও ১১২ নম্বর টোল-ফ্রি হেল্পলাইন চালু করে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে বাস্তব পরিস্থিতি বলছে—শুধু প্রচার নয়, প্রয়োজন আরও সক্রিয় ও সমন্বিত উদ্যোগ।