কাশ্মীর ভ্রমণে গিয়ে রীতিমতো মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলেন মেদিনীপুরের পর্যটকদল। হিমশীতল পহেলগামের সৌন্দর্য দেখতে গিয়ে তারা দেখেছেন জীবনের সবচেয়ে আতঙ্কের দিন। ঘরবন্দি কাটানো সেই অভিজ্ঞতা এখনো চোখে-মুখে স্পষ্ট।
গত ১৪ এপ্রিল খড়্গপুর শহর থেকে একটি বেসরকারি পর্যটন সংস্থার উদ্যোগে ৩৫ জনের একটি দল প্রথমে অমৃতসর, সেখান থেকে জম্মু হয়ে শ্রীনগরে পৌঁছায়। ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার তাঁরা দু’টি ট্রাভেলারে চড়ে পহেলগামে পৌঁছন। কিন্তু পহেলগাঁওয়ে ঢুকতেই খবর আসে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার—অল্প কিছু সময় আগেই পাশের বৈসরণ ভ্যালিতে হামলায় বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
খড়্গপুরের ইন্দা এলাকার বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত কর্পোরেট কর্মী সরোজকুমার মাসান্ত জানান, “আমরা গাড়ি থেকে নামতেই হোটেল কর্মীরা দৌড়ে এসে বলেন—জঙ্গি হামলা হয়েছে, ভিতরে চলে আসুন। এরপর থেকেই আমরা কার্যত বন্দি। দোকানপাট বন্ধ, রাস্তায় শুধু সেনার টহল। হোটেলের জানালা দিয়ে তাকালেই আতঙ্ক।”
এই আতঙ্কের মধ্যে চারদিন হোটেলবন্দি থাকার পরে বৃহস্পতিবার ভোরে তাঁদের হোটেল থেকে বের হওয়ার অনুমতি মেলে। এরপর তাঁরা জম্মুর রাস্তায় রওনা দেন। রামবানে ধস নামার কারণে অনেক জায়গায় যানজট ও ভয়ের পরিবেশ পেরিয়ে তাঁরা বর্তমানে কাটরার পথে। গন্তব্য—বৈষ্ণোদেবী মন্দির।
সঙ্গে ছিলেন সৌমিত্র সর্দার, প্রবীর সোম, স্বপন চন্দ্রের মতো পর্যটকরাও। সকলেই একবাক্যে বলছেন—জীবনের সুযোগ এবার একেবারে অন্য অর্থে বোঝা গেল। প্রথমবার কাশ্মীরে এলেও পহেলগাঁওয়ে সৌন্দর্য উপভোগ না করতে পারার দুঃখ যেমন আছে, তেমনই আরও বেশি অনুভব হচ্ছে—প্রাণে বেঁচে ফেরার পরম সৌভাগ্য।
পহেলগাঁওয়ে এখন থমথমে পরিস্থিতি। সেনার টহল, দোকানপাট বন্ধ, পর্যটকদের প্রবেশ নিষেধ। হোটেলগুলিও পর্যটকশূন্য। সরোজবাবুর কথায়, “পাহাড়ের সৌন্দর্য নয়, মনে থাকবে সেই হোটেলের জানালায় কাটানো নিঃশব্দ রাতগুলো, যখন জানতাম না পরের মুহূর্তে কী হবে।”